আমার বাবা আমার গর্ব
আমার বাবা আমার গর্ব
বিজন কুমার
Photo: Internet with Little Edition
আমার বাবা একজন প্রান্তিক কৃষক ছিলেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কাদা-মাটির সাথে লড়াই করে টুকরো টুকরো জমিতে পরম মমতায় ফলাতেন সোনালি ফসল। রক্ত জল করে ফলানো সেই ফসল দিয়ে সংসার চালাতেন কোনমতে। তিন ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি ছয় সদস্যের পরিবার ঐটুকু ফসল দিয়ে কীভাবে চালাতেন তা আমি আজও ভেবে কূল পাই না। ছোটবেলা থেকে অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে না উঠলেও, সাচ্ছল্যের চাদরে মোড়া জীবন ছিল না আমাদের কখনোই। তিনি আমাদের না পড়াতে পেরেছেন ভালো স্কুলে, না পেরেছেন দামি জামা, জুতো, ঘড়ি দিতে। তবে তিনি যে জিনিসটি দু-হাত ভরে দিয়েছেন তা সপ্ত-কোহিনূরের চেয়েও দুর্লভ ও অমূল্য। তিনি দিয়েছেন জীবনে লড়াই করে বেঁচে থাকার জন্য দুর্বার সাহস আর অনন্ত প্রেরণা। আর সেই জন্যই আমি হতে পেরেছি আজকের বিজন কুমার। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের সামান্য অর্জনগুলোর অসামান্য দাবিদার যিনি, তিনি আর কেউ নন, আমার হৃদয়ের স্পন্দন আর ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাস, আমার বাবা। এ ক্ষণে যাঁর নাম না নিলে, যাঁর অবদান স্বীকার না করলে মহাপাপ হবে তিনি আর কেউ নন, আমার হৃদ-মন্দিরের আরাধ্য দেবী যাঁর ধ্যানে সদা তন্ময় হয়ে থাকি, আমার মমতাময়ী মা। আমার ক্ষুদ্র এ জীবনে তাঁর ঋণ মহাকাশাপেক্ষা বৃহৎ আর সমুদ্রপেক্ষা গভীর যা কখনো শোধ করা সম্ভব না। ক্ষুদ্র এই জীবনে যা কিছু অর্জন করেছি তা হিমালয় পাদদেশে দাঁড়িয়ে এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণের স্বপ্নের মতো হলেও আমাদের মতো পরিবারের কাছে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জোনাকির আলো যেমন দিশা দেখায় ঠিক তেমনই। জীবনবেলার দ্বিপ্রহরে দাঁড়িয়ে আজ যে নামটি কর্ণকূহরে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, যে শব্দটি মস্তিষ্কে বার বার আলোড়িত হচ্ছে, যে মুখটি অক্ষিসমীপে বার বার উদ্ভাসিত হচ্ছে তা হল 'বাবা'। আমার ক্ষুদ্র এ জীবনে সততা ও নিষ্ঠার সাথে পরিশ্রম করে যেটুকু সুনাম ও স্বীকৃতি অর্জন করেছি তার সবটুকু এ ক্ষণে বাবার চরণকমলে অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করছি। আজ পরম করুণাময় ঈশ্বরের শ্রীপাদপদ্মে করজোরে একটাই প্রার্থনা, জীবনবেলার গোধূলিতেও যেন বাবা নামক ছত্রের ছায়াতলে শান্তির আশ্রয় নিতে পারি, বাঁচতে পারি নিষ্ঠুর পৃথিবীর নির্মম কষাঘাত থেকে।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, অর্থনীতি বিভাগ, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
ইমেইল: bezon.kumar3@gmail.com
No comments